কুয়েতের সুক আল-জুম্মা বা ফ্রাইডে মার্কেট। সেখানে নতুন-পুরাতন পণ্যের বিশাল সমাহার।
সপ্তাহে ৩ দিন খোলা এ মার্কেটে পুরো এক মাসের উপার্জন করে থাকেন অনেকে। স্বল্প পুঁজি দিয়ে বেশি অর্থোপার্জনের সুযোগ থাকায় সেখানে প্রচুরসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীরা ব্যবসা করছেন।
পশ্চিম এশিয়ার দেশ কুয়েত। আরবের উত্তরাঞ্চলীয় পারস্য উপসাগরের প্রান্তে এর অবস্থান। দেশটির মোট জনসংখ্যার তিন গুণেরও বেশি অভিবাসী রয়েছেন।
অভিবাসী সংখ্যার তালিকায় তৃতীয় স্থানে বাংলাদেশ।
আধুনিক কুয়েতের সব শহরের অত্যাধুনিক শপিং মল গুলো সকলের দৃষ্টি কাড়ার মতো হলেও দেশটির সুয়েখ এলাকার মরুর বুকে ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা ”সুক আল-জুম্মা” বা ফ্রাইডে মার্কেট ব্যবসায়িক বহুল জায়গা হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
কুয়েতের ”সুক আল-জুম্মা” ফ্রাইডে মার্কেট সপ্তাহের তিন দিন বৃহস্পতি থেকে শনিবার এখানে বেচা-কেনায় প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় পার করেন স্থানীয় নাগরিকসহ প্রবাসীরা।
ব্যস্ত বিক্রেতা আর ব্যস্ত ক্রেতার এই হাটে নতুন-পুরাতন নানান পণ্যের বিশাল সমাহার।
এ হাটে পণ্য কিনতে আসা ক্রেতা বিভিন্ন দেশের হলেও বিক্রেতাদের একটি বড় অংশ প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
অতীতে ওই স্থানে খোলা আকাশের নিচে হাট বসতো, এখন এ হাটের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে, তবে শহুরে পরিবেশের ন্যায় সব সুবিধা এখানে নেই।
এখানে সবচেয়ে বড় গর্বের একটি জায়গা দখল করে আছেন এ হাটে কর্মরত বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
সুক আল জুমা মার্কেটে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের সুবিধার্থে নতুন-পুরাতন, কম মূল্য, বেশি মূল্যের জিনিস ক্রেতারা যাচাই-বাছাই করে কিনে নিতে পারেন।
এখানে পাওয়া যায় নতুন-পুরাতন জিনিসপত্র যথাক্রমে, ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি, রেডিমেড কাপড়,বাসনপত্র, কার্পেট, ব্যাগ, সোফা সেট,ফার্নিচার, এক্সেসরিজসহ ইত্যাদি।
শহুরে পরিবেশে যেসব উন্নত শপিং মল রয়েছে, সেসব মার্কেটের নতুন পণ্য গ্যারান্টি দিয়ে বিক্রি করা হয়।কিন্তু সুক জুমায় গ্যারান্টি দেওয়া হয়না।পণ্যের গুণগত মান প্রায় কাছাকাছি তবে ওইসব মার্কেটের তুলনায় সুক জুমায় পণ্য মূল্য অনেক কম।
যেমন একটি সোফা সেট বহুল পরিচিত দাজিজ এলাকার সোফা মার্কেটে যদি ১৫০ (কুয়েতি দিনার) বিক্রি হয়ে থাকে, তাহলে সেটি সুক জুমায় পাওয়া যাচ্ছে এর অর্ধেক মূল্যে।
সুক জুমায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা সব ধরনের ব্যবসা করছেন।
মুন্সিগঞ্জের সাবুদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে সুক জুমায় সোফা ব্যবসা করছেন।
প্রবাসী এ ব্যবসায়ি বলেন, ব্যবসার ক্ষেত্রে ভালো খারাপ দুটা মিলিয়েই চলছে ব্যবসা। দোকান “বস্তা” ভাড়া আগের চেয়ে একটু বেশি পাশাপাশি স্থানীয় বাজারের নিয়মকানুন মেনে ব্যবসা করাও অনেকটা দুরূহ হয়ে উঠেছে।
সুক জুমার ব্যবসায়ি সিলেটের শামীম আহমদ।দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এ বাজারে পুরাতন ইলেক্ট্রনিক জিনিসপত্র বিক্রি করছেন এই ব্যবসায়ি। তিনি বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন অফিস ও নাগরিকদের কাছ থেকে পুরাতন জিনিসপত্র নিয়ে এসে এ বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
পুরাতন পণ্যের কোনো গ্যারান্টি নেই, কাস্টমার তার পছন্দের জিনিস কিনে নিচ্ছেন।কেনা পণ্য ফেরত যোগ্য নয়।বলেন, সুক জুমার ব্যবসায়ি শামিম।
মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থাকার ফলে অভিবাসীদের সার্বিক উন্নতি খুব সহজেই হচ্ছে।
কুয়েতের সর্বত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দখলদারিত্ব একদিকে যেমন গর্বের, অন্যদিকে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রত্যাশিত লাভের মুখ দেখছেন তারা।
দেশীয় পরিবেশ আর সংস্কৃতির ছোঁয়ায়, কুয়েতের সুক-আল জুম্মার বিদেশের হাটে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত আরো মজবুত হবে বলে মনে করছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা।